আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে Join করুন! এখানে আপনি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও রহস্য বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য জানতে পারবেন। Join Now

নোটিশ

এসো, যদি জানতে চাও!

মহাবিশ্বের সূচনা | বিগ ব্যাং থিওরি | মায়াবী জগত

এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি আজ থেকে প্রায় ১,৩৭০ কোটি বছর আগে।
মহাবিশ্বের সূচনা
মহাবিশ্বের সূচনা

এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি আজ থেকে প্রায় ১,৩৭০ কোটি বছর আগে।


মহাবিশ্বের প্রসারণ
মহাবিশ্বের প্রসারণ

বিগ ব্যাং শব্দটিকে বাংলায় অনুবাদ করলে দাঁড়ায় বিশাল বা মহা বিস্ফোরণ, তবে এটা বলা ভুল হবে কারণ বিগ ব্যাং কোনো বিস্ফোরণ নয় বরং এটা মহাবিশ্বের প্রসারণ।


আমরা জানি সবকিছুর ই একটা শুরু আছে। তেমনি এই বিশাল মহাবিশ্বেরও একটা শুরু আছে। কিভাবে এই শুরু তা নিয়ে অনেক অনেক মতবাদ আছে। কিন্তু বর্তমানে প্রায় সর্বজনগৃহীত মতবাদ বা তত্ত্ব হচ্ছে এই বিগ ব্যাং থিওরি। এই তত্ত্ব অনুযায়ী বিগ ব্যাং এর আগে আলো, সময় বা কোন কিছুরই অস্তিত্ব ছিল না। এই তত্ত্বতে শুধু বিং ব্যাং এর সময় ও পরে ঘটা ঘটনাগুলোর ব্যাখ্যা রয়েছে।


আমাদের মহাবিশ্ব যে রোজ প্রসারিত হচ্ছে সে ধারণা অনেক আগে থেকেই থাকলেও ১৯২৯ সালের আগ পর্যন্ত তার উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ ছিল না। সে বছর স্যার এডুইন হাবল তাঁর তত্ত্বে বলেন যে, মহাবিশ্ব সময়ের সাথে প্রসারিত হচ্ছে এবং মহাকাশের বস্তুগুলো ক্রমে একে অপরের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এবং বর্তমানে এই তত্ত্বকে ভিত্তি করে গাণিতিকভাবে দেখা গিয়েছে যে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি আজ থেকে প্রায় ১,৩৭০ কোটি বছর আগে এবং আমরা যা দেখছি, সবকিছুর সৃষ্টি একটি বিন্দু থেকে যার তাপমাত্রা ও ঘনত্ব ছিল অসীম। এটি হঠাৎ প্রসারিত হবার পরেই ধীরে ধীরে সৃষ্টি হয় নীহারিকা, নক্ষত্র, গ্রহ এসব। একেই বলা হয় বিগ ব্যাং। বিগ ব্যাংকে বিস্ফোরণ মনে করা হলেও বিশেষজ্ঞরা একে প্রসারণ হিসেবে ব্যখ্যা করেন।


মহাবিশ্বের প্রসারণ
মহাবিশ্বের প্রসারণ

এখন অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, বিগ ব্যাং এর সময় বিস্ফোরিত বিন্দু থেকেই যেহেতু আমাদের মহাবিশ্বের সৃষ্টি, সুতরাং ওই বিন্দু যেখানে ছিল, ওটাই আমাদের মহাবিশ্বের কেন্দ্র! যুক্তি অনুযায়ী সেটাই কিন্তু হবার কথা। কিন্তু আমরা একটা জিনিস অনুধাবন করতে পারিনা যে, ব্যাপারটা কোন স্থানে একটা বিস্ফোরণ হবার মতো না। ব্যাপারটা হচ্ছে তখন স্থান বলতে কিছু ছিল না। বিগ ব্যাং এর পর ওই বিন্দুতে ঘনীভূত থাকা স্থানটাই ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে যার মধ্যেই আমরা সময়, আলো এসবের উপস্থিতি দেখছি।


আর মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে মানে এই না যে এতে থাকা বস্তুগুলোও প্রসারিত হচ্ছে। শুধুমাত্র মহাবিশ্বের আকার বাড়ছে এবং তা সবদিকে সমান ভাবে বাড়ছে। ব্যাপারটা কল্পনা করতে মনে করুন, আপনি একটা বেলুনের মধ্যে কিছু ক্যান্ডি ভরে ফু দিচ্ছেন, এতে বেলুনের ভেতরের জায়গাটা বাড়ছে শুধু, কিন্তু ক্যান্ডির আকার কিন্তু একই থাকছে। মহাবিশ্বও ঠিক এই বেলুনের মতোই। আর বেলুনের গায়ে কিছু চিহ্ন দিয়ে দিলে দেখবেন ফোলার সাথে সাথে এরা একে অপরের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, আর অন্তরীক্ষের বস্তুগুলোর সাথেও সেই একই ঘটনা ঘটছে। আর আমরা সাধারণত ভাবি এভাবে, “বিন্দুটি ছিল একটা ফোলা বেলুনের মতো, যার মধ্যে ছিল এই মহাবিশ্ব। সেই বেলুন ফাটিয়ে দেয়ার পর সবকিছু ছিটকে বেরিয়ে আসে!” যা সঠিক না।


এবার আসি বিগ ব্যাং এর সময় কি হয়েছিল সে বিষয়ে। সেই মহা বিস্ফোরণের ঠিক এক সেকেন্ড পর ওখানকার পরিবেশের তাপমাত্রা ছিল প্রায় ৫৫০ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস (আসলে এটা কল্পনা করাও অকল্পনীয়)। তখন মহাবিশ্বে উপলব্ধ ছিল কেবল বস্তু তৈরির মৌলিক কিছু কণা যেমন নিউট্রন, ইলেকট্রন, প্রোটন এবং আরও ক্ষুদ্র কিছু কণিকা। এই অবস্থা আসলে চোখে দেখা সম্ভব ছিল না, কারণ মুক্ত ইলেকট্রন গুলো আলোকে (ফোটন) বাইরে বের হতে দিচ্ছিল না, যেভাবে মেঘ সূর্যকে ঢেকে রাখে সেরকম অবস্থা ছিল। সময়ের সাথে মহাবিশ্ব ঠাণ্ডা হতে হতে এক পর্যায়ে মুক্ত ইলেকট্রনগুলো নিউক্লিই এর সাথে মিলিত হয়ে নিরপেক্ষ পরমাণু গঠন করে। এভাবে অন্ধকার মহাবিশ্বে প্রথম আলো ছড়িয়ে পড়তে সময় নেয় প্রায় ৪ লক্ষ বছর! বিগ ব্যাং এর পর এই প্রথম আলোকে বলা হয় কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড (CMB)। এবং এই CMB পর্যালোচনা করেই নির্ধারিত হয়েছে মহাবিশ্বের বয়স। এভাবে পরমাণু থেকে বিভিন্ন অণু, এরপর কোটি কোটি বছরের ব্যবধানে মহাজাগতিক গ্যাস ও ধূলিকণা থেকে নীহারিকা, নক্ষত্র, ছায়াপথ, গ্রহ উপগ্রহ এসবের উৎপত্তি ঘটে। ব্যাপারটা অনেক বিশাল ও বিস্তারিত কিন্তু সংক্ষেপে লিখার জন্য এভাবে বললাম। পরে কখনো হয়তো শুধু এই সময়টার ব্যাপারেই বিস্তারিত লেখার চেষ্টা করবো।


কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড ম্যাপ (CMB)
কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড ম্যাপ (CMB)

কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড ম্যাপ (CMB)

জ্যোতির্বিদগণ যখন মহাবিশ্বের উদ্ভব সম্পর্কে জানতে পারলো, তখন তাঁরা এর প্রসারণ নিয়েও জানতে আগ্রহী হলো। তত্ত্ব অনুযায়ী মহাবিশ্বের জন্মের প্রথম সেকেন্ডে এর প্রসারণের গতি ছিল আলোর গতির থেকে বেশি। কিন্তু এটা স্যার এলবার্ট আইনস্টাইন এর আপেক্ষিকতা তত্ত্ব এর শর্ত ভঙ্গ করেনা, কারণ তিনি তত্ত্ব দিয়েছিলেন মহাবিশ্বের কোন বস্তুই আলোর থেকে বেশি বেগে চলতে পারবে না। অর্থাৎ এক্ষেত্রে কোন বস্তু আলোর থেকে বেশি বেগে চলছে না, বরং পুরো মহাবিশ্বই এই বেগে প্রসারিত হয়েছে।


মহাবিশ্ব শুধু প্রসারিতই হচ্ছে না, সময়ের সাথে সাথে এই প্রসারণের গতি ধীরে ধীরে বাড়ছে ও। কোন এক সময় দেখা যাবে (যদি তখনও মানব সভ্যতা থাকে) পৃথিবী থেকে আমরা বাইরের কোন ছায়াপথ দেখতে পাচ্ছি না। কিংবা নিজেদের ছায়াপথের অনেক কিছুই আর দৃশ্যমান না! এর কারণ হচ্ছে আমরা কোন বস্তু তখনই দেখি যখন ওই বস্তু থেকে আলো প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে এসে পড়ে। এবার ধরুন যে বস্তুটি আপনি দেখছেন তা আলোর বেগে আপনার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। অর্থাৎ ওই বস্তু থেকে আলো প্রতিফলিত হয়ে যে বেগে আপনার চোখে পৌঁছাতে চাইছে, ঠিক সেই বেগে বস্তুটিও আপনার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, মানে ওই প্রতিফলিত আলো কখনোই আপনার চোখে পৌঁছাবে না এবং আপনি ওই বস্তুটি দেখবেন না। কঠিন লাগছে? আচ্ছা , সহজে বলি। ধরুন আপনি একটা চলন্ত লোকাল বাসে ওঠার জন্য দৌড় দিলেন, কিন্তু আপনি যে গতিতে দৌড়ুচ্ছেন, বাসটিও সেই একই গতিতে সামনে চলছে, ফলাফল কি হবে? ফলাফল আপনি ছুটতেই থাকবেন আর বাসটিও চলতেই থাকবে, কিন্তু আপনি ওর নাগাল পাবেন না। ঠিক এভাবেই মহাকাশের কোন বস্তুর আমাদের থেকে দূরে সরে যাবার গতি যখন আলোর বেগের সমান হবে তখন সেখান থেকে কোন সংকেত বা আলো আমরা আর দেখতে পারবো না।


বিগ ব্যাং বা মহাবিশ্বের সৃষ্টির যেকোনো মডেল তৈরি করতে গেলেই এর সাথে আরেকটা প্রশ্নের উদ্ভব ঘটে, আর তা হচ্ছে আমাদের এই মহাবিশ্বই একমাত্র মহাবিশ্ব না। আরও এরকম অনেক মহাবিশ্ব আছে। মাল্টিভার্স বা একাধিক মহাবিশ্বের উপস্থিতির সরাসরি কোন প্রমাণ না পাওয়া গেলেও এর অস্তিত্ব সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন