![]() |
| বাজপাখি |
বাজপাখি হলো মাঝারী আকৃতির এক প্রকার শিকারী পাখি। একে ক্ষিপ্রতার প্রতীক মানা হয়। বাজপাখি মূলত তার তীক্ষ্ণদৃষ্টির জন্য খ্যাত। মেয়ে বাজপাখি পুরুষ বাজপাখির চেয়ে আকৃতিতে বড় হয়। বাজপাখির সবচেয়ে বড় আবাসস্থল হলো মধ্য আমেরিকা। এছাড়াও এশিয়াতেও এদের দেখা মেলে। বাংলাদেশে পাখিটি এখন কালেভদ্রে দেখা মেলে। একটা বাজপাখি প্রায় 70 বছর পর্যন্ত জীবিত থাকে।
একটা বাজপাখি প্রায় 70 বছর পর্যন্ত জীবিত থাকে, কিন্তু 40 বছর বয়স আসতেই ওকে নিজের জীবন নিয়ে একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ওই বয়সে এসে তার শরীরের প্রধান তিনটি অঙ্গ দুর্বল হয়ে পড়ে। থাবা কিংবা পায়ের নখ বেশ লম্বা ও নরম হয়ে যায় আর তাই স্বীকার করা তার জন্য প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। ঠোঁটটা সামনের দিকে মুরে যায় বা অনেকখানি ভেঙে যায় যার ফলে খাবার খুঁটে খাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। দানা ভারী হয়ে যায় যে কারণে বুকের কাছে আটকে যাওয়ার দরুন উড়তে আগের তুলনায় বেশি কষ্ট হয়। শিকার খোঁজা ধরা ও ধাওয়া এই তিনটি ধীরে ধীরে বেশ মুশকিল হয়ে পড়ে।
ফলে এ সময় এটা বাজপাখি অনাহারে কিংবা অর্ধাহারে জীবন অতিবাহিত করেন। ওর কাছে তিনটে পথ খোলা থাকে এক আত্মহত্যা করা, 2 শকুনের মতো মৃতো দের খাওয়া, আর 3 নিজেকে পুনরস্থাপিত করে আগের মত জীবনের মূল স্রোতে ফেরা এবং বাকি জীবন বীরত্বের সঙ্গে বেঁচে থাকা থাকা।
জীবনের এই খারাপ সময়টাতে বাজপাখি একটা উঁচু পাহাড়ে আশ্রয় নেয়। সেখানে নতুন করে বাসা বাঁধে আর শুরু করে সম্পূর্ণ নতুন করে বেঁচে থাকার সব ধরনের প্রচেষ্টা। সে প্রথমে তার ঠোটটা পাথরের আঘাত করতে করতে একেবারে ভেঙে ফেলে। শিকারি একটা পাখির কাছে এর থেকে যন্ত্রণার আর কিছুই হতে পারে না। সে তার নখ গুলো ভেঙে ফেল আর অপেক্ষা করে নতুন নখ ও ঠোঁট গজানোর। কিছুদিন অপেক্ষার পর নতুন নখ ও ঠোট গজানোর সাথে সাথে সে তার ডানার সমস্ত পালকগুলো নিজে নিজে ছিড়ে ফেলে।
কষ্ট সহ্য করেই নতুন পালক গজানোর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। 150 দিনের অসহ্য যন্ত্রণা ও প্রতীক্ষার পর সেসব নতুন করে ফিরে পায়। ফিরে পায় আগের মতো স্বীকার করার শক্তি, উড়ার ক্ষমতা আর ক্ষিপ্রতা।
তরুণ বয়সের মত ফিরে পায় শিকার ধরার মতো দৌড়ানোর গতি। এরপর সে আরো 30 বছর জীবিত থাকে জীবনদ্দশায় বাজপাখি কখনোই অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে বেঁচে থাকে না।
ইচ্ছা স্বক্রিয়তা ও কল্পনা শক্তি আমাদের থেকে হারিয়ে যায়। বয়স চল্লিশের কোঠায় আসতে প্রায় অর্ধ জীবন এই আমাদের উৎসাহ আকাঙ্ক্ষা ও শক্তি কমে যায়। আমাদেরও উচিত আরশে ভরা মানসিকতা ত্যাগ করে, অতীতের ভরাক্রান্ত মনকে শরীয়ে, অতীতের সকল না পাওয়াকে ভুলে উজ্জীবনের কষ্টকে কাটিয়ে ওঠা। বাজের ঠোঁট ডানা আর থাবার মতোই 150 দিন না হলেও অন্তত এক মাসো যদি আমরা চেষ্টা করি। হয়তো আবার আমরা ফিরে পাব নতুন উদ্যম অভিজ্ঞতা এগোনোর অন্তরহীন দৌড়ানোর শক্তি।
একটা সামান্য বাজপাখি যদি জীবনে টিকে থাকতে এতটা কষ্ট এতটা ত্যাগ স্বীকার করতে পারে, মনোবল ধরে রাখতে পারে, পরিশ্রম করতে পারে, সৃষ্টির সেরা জীব হয়ে আমরা কেন পারব না। নিজেকে কখনোই হারাতে দেবেন না আর হার মানবেন না জয় একদিন হবেই। হবে উদিত হবে সফলতার নতুন এবং রক্তিম সূর্য।
