আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে Join করুন! এখানে আপনি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও রহস্য বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য জানতে পারবেন। Join Now

নোটিশ

এসো, যদি জানতে চাও!

কাগজের মুদ্রার প্রচলন যেভাবে শুরু হলো- মায়াবী জগৎ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস বে কলোনিতে ১৬৯০ সালে সর্বপ্রথম কাগজের নোটের প্রস্তাবনা করা হয়। প্রথম ডলার ছাপানো হয় ১৭৬০ সালে।
কাগজের মুদ্রা 


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস বে কলোনিতে ১৬৯০ সালে সর্বপ্রথম কাগজের নোটের প্রস্তাবনা করা হয়। প্রথম ডলার ছাপানো হয় ১৭৬০ সালে। বাংলাদেশ বাংলাদেশি টাকার প্রচলন শুরু হয় ১৯৭২ সালের ১ জানুয়ারিতে।


বর্তমানে কাগজের মুদ্রার প্রচলন রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে পরবর্তীতে অন্য রকম মুদ্রার প্রচলন আসতে পারে। তবে আজ কথা বলব কাগজের মুদ্রা প্রচলন যেভাবে এসেছিল।

 

Read more: রসগোল্লার ইংরেজি নাম কি? যা ৯৯% মানুষ ভুল করে - মায়াবী জগত


প্রায় ছয় হাজার খ্রীষ্টপূর্বাব্দে মেসোপটেমীয় সভ্যতার সময় বিনিময় ব্যবস্থার প্রচলন করা হয়েছিল। ওখানকার জাতিগোষ্ঠী ফোনিসিয়ানরা এই বিনিময় ব্যবস্থার প্রচলন করেছিলেন। বিনিময় ব্যবস্থা টা আসলে কি? বিনিময় ব্যবস্থা বা এক্সচেঞ্জ সিস্টেম হলো কোনো কিছু দিয়ে এর বদলে অন্য কিছু আনা। অর্থাৎ অদল বদল করা। একটি উদাহরণ দেওয়া যাক- ধরুন আপনার কাছে এক কেজি আলু আছে। কিন্তু আপনার আলুর প্রয়োজন নেই। আপনার প্রয়োজন এক কেজি ডাল। তো এখন আপনি এক কেজি আলুর বিনিময় এক কেজি ডাল নিতে চাইবেন। আপনার প্রতিবেশীর কাছে এক কেজি ডাল রয়েছে । সেও চায় যে এক কেজি ডালের বদলে এক কেজি আলু নিতে । তো আপনি তার কাছে গিয়ে এভাবেই এক কেজি আলুর বদলে এক কেজি ডাল নিতে চাইবেন। এভাবে আপনি আপনার অপ্রয়োজনীয় জিনিস এর বদলে প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারবেন। আশা করছি আপনারা বুঝতে পেরেছেন। তবে এই বিনিময় পদ্ধতিতে অনেক ভোগান্তি রয়েছে। আপনার কাছে এক কেজি আলু রয়েছে আপনি এক কেজি ডাল খুঁজছেন। কিন্তু আপনি এরকম কাউকে খুঁজে পেলেন না যার কাছে ডাল রয়েছে বা থাকলেও তার ডালের খুব প্রয়োজন। তাছাড়াও হয়তো তার অন্য কিছুর প্রয়োজন যা আপনার কাছে নেই। এভাবে আপনার সাথে ঐ লোকটির জিনিস অদল-বদল সম্ভব হবে না।


Read more: কি হবে পৃথিবীতে যদি মাত্র ৫ সেকেন্ড অক্সিজেন না থাকে! - মায়াবী জগত


 এটা কি আর অন্য ভাবে ভাবা যায় যেমন আপনার কাছে রয়েছে ১ কেজি আলু কিন্তু ওই লোকটির প্রয়োজন দুই কেজি আলু অথবা আপনার প্রয়োজন এক কেজি ডালের কিন্তু ঐ লোকের কাছে রয়েছে আধা কেজি ডাল। অর্থাৎ দুজনের ইচ্ছা যদি পূরণ না হয় তাহলে বিনিময় করা সম্ভব হয় না। অর্থাৎ প্রাচীনকালের এই বিনিময় পদ্ধতিটি খুবই ভোগান্তির ছিল। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দে সুমেরীয়রা বার্লি বিক্রির জন্য সর্বপ্রথম ধাতব মুদ্রা ব্যবহার করে। পরবর্তীতে আনুমানিক ৭০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে রুপা ও স্বর্ণের সংকর দিয়ে তৈরি মুদ্রার প্রচলন শুরু হয়। এর প্রচলন সর্বপ্রথম লিডিয়া অর্থাৎ বর্তমান পশ্চিম তুরস্কে মুদ্রার প্রচলন শুরু হয় এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে মুদ্রা ব্যবস্থার প্রচলন শুরু হয় । পরবর্তীতে এই ব্যবস্থার প্রচলন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।


Read more: দুনিয়া পাল্টানো ক্যালকুলাসের আবিষ্কার যেভাবে হয়েছিল


সর্বপ্রথম কাগজের মুদ্রা বা কাগজের নোটের প্রচলন হয় চীনে। কাগজের নোটের প্রচলনের আরো ৬০০ বছর আগেই মালবেরি গাছের বাকল থেকে কাগজ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল চীনারা। প্রথমদিকে সেই গাছের বাকল থেকেই কাগজ তৈরি হতো। পরবর্তীতে গাছের বাকল এর বদলে গাছের কান্ডের নরম অংশ কেটে তা থেকে কাগজ তৈরি করা হয়। ফলে কাগজ আরো হালকা হয়ে গেল এবং লেখাও সহজে বুঝা যেত। তখন ট্যাঙের রাজত্ব ছিল । তখন কাগজের মুদ্রার ব্যবহার ধীরে ধীরে বাড়তে থাকলো। ট্যাঙের রাজত্বকালে বাণিজ্যের অধিক প্রসারের ফলে তখন ধাতব মুদ্রার বদলে কাগুজে মুদ্রা দ্বারা লেনদেন হতে থাকলো। ধাতব মুদ্রা অত্যাধিক ভারি ও তার দাম অত্যধিক থাকায় নৌপথে জলদস্যুদের আক্রমণের শঙ্কায় ধাতব মুদ্রার বদলে কাগুজে মুদ্রার ব্যবহার করা হতো। ট্যাঙের রাজত্বের শেষের দিকে বণিকরা ধাতব ও স্বর্ণমুদ্রা সব রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা রাখতে শুরু করলো। পরিবর্তে সমমূল্যের কাগজের নোট নিতে লাগলো। পরবর্তীতে মিংয়ের রাজত্বকালে সৃষ্টি হলো অর্থ মন্ত্রণালয়ের। নিয়ে আসা হলো নোট ব্যবস্থা। অর্থাৎ ১, ২ , ৫, ১০ , ৫০, ১০০… ইত্যাদি নোটের মতো তখনকার চীনেও চালু হলো‌ ভিন্ন ভিন্ন নোট ব্যবস্থা । এটি সমগ্র চীনে ছড়িয়ে পড়লেও তখনকার ইউরোপের কাছে সব অজানা ছিল। একদিন ভেনিসের বণিক এবং পর্যটক মার্কো পোলো চীন পর্যটনে এলেন। তখন শাসক ছিল কুবলাই খানের । বিখ্যাত এই বণিক চীনে এসে তো অবাক। কারণ এখানে কাগুজে মুদ্রার অধিক ব্যবহার। পরবর্তীতে মার্কো পোলো পুরো ইউরোপকে এ বিষয়টি জানান। কিন্তু মার্কো পোলোর কথা কেউ বিশ্বাস করেনি । সবাই হাসি ঠাট্টায় মেতে উঠেছিল। ফলে পশ্চিমারা আরো পিছিয়ে গেল । কিন্তু চীনে তখন কাগজের নোট ছাপানো শুরু হয়ে গেল। চীনে তখন প্রয়োজনমতো নোট ছাপানো হতো। কিন্তু সেই নোট আর ফেরত নেওয়া হতো না। যার ফলে সমগ্র চীনে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস বে কলোনিতে ১৬৯০ সালে সর্বপ্রথম কাগজের নোটের প্রস্তাবনা করা হয়। প্রথম ডলার ছাপানো হয় ১৭৬০ সালে। পরবর্তীতে ইউরোপেও কাগজের নোটের প্রচলন শুরু হলো।  কেনাকাটা সহ নানান লেনদেনে বেড়ে গেল কাগজের নোটের ব্যবহার।


এবার আসি ভারতীয় উপমহাদেশে। ভারতীয় উপমহাদেশে ইংরেজরা সর্বপ্রথম কাগজের নোটের প্রচলন শুরু করে। ১৮৬১ সালে সর্বপ্রথম মুদ্রা আইন পাস হয় এবং ১৯৩৫ সালে রিজার্ভ ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ বাংলাদেশি টাকার প্রচলন শুরু হয় ১৯৭২ সালের ১ জানুয়ারিতে। ভারতীয় উপমহাদেশে থাকাকালীন অবস্থায় তৎকালীন বাংলাদেশিরা রুপিকে মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করতো। বাংলাদেশের ব্যাংক নোট প্রস্তুত করা হয় গাজীপুরে অবস্থিত টাকশালে (দ্য সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস) এ। এবং এখনও এভাবেই নোট ছাপানো হচ্ছে। ধন্যবাদ।  


তথ্যসূত্র:

daily-bangladesh 


Keyword:

মুদ্রা, কাগজের মুদ্রা, টাকা, ডলার, মুদ্রার প্রচলন, কাগুজে মুদ্রার প্রচলন, ইতিহাস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন