| কাইমেরিজম হলো মাবদেহের এমন বিশেষ অবস্থা যেখানে একজনের দেহে একের অধিক রকমের জিনোটাইপ বা জিন দেখতে পাওয়া যায়। |
কখনো হঠাৎ কোনো প্রয়োজনে ডিএনএ টেস্ট করানোর পরে যদি জানতে পারেন, আপনার শরীরে একজন না দুইজন মানুষের অস্তিত্ত্ব রয়েছে বা আপনার দেহের ডিএনএ সেট আপনি যার থেকে পেয়েছেন সে এ পৃথিবীতে কখনো জন্মই নেয়নি, ব্যাপারটি বিশ্বাসযোগ্য মনে হবে নাকি অদ্ভুত এটি কখনো হতেই পারে না মনে হবে?
এ ধরনের ব্যাপার সম্ভব এবং পৃথিবীতে নানা ঘটনার জের ধরে এর প্রমাণও পাওয়া গেছে। এমন অবস্থার নাম কাইমেরিজম এবং এ ধরনের বৈশিষ্ট্য ধারণকারী ব্যক্তিকে বলা হয় কাইমেরা বা কাইমেরিক।
কাইমেরিজম সম্পর্কে অনেক বিখ্যাত ঘটনা রয়েছে। এর মধ্যে বহুল প্রচলিত একটি হচ্ছে টেইলর মিউল এর সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি।
ক্যালিফোর্নিয়ার একজন মডেল ও গায়িকা হলেন টেইলর মিউল। জন্ম থেকেই কিছু অস্বাভাবিকতা ছিল টেইলরের শরীরে। তার শরীরের বাম দিকের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ একটু বেশি বড় ডান দিকের চাইতে। শরীরের একদম মাঝ বরাবর চলে গেছে একটি লাইন, একদিকের ত্বকের রং গাড়, আরেকদিকের ত্বকের রং হালকা।এই দাগটাকে একটা জন্মদাগ বলেই মনে করতেন টেইলর। কিন্তু কাইমেরিজম নামের একটি রোগের ওপরে একটি টিভি ডকুমেন্টারি দেখার পর বদলে যায় তার ধারণা।
শুধু জন্মদাগ নয়, ছোটবেলা থেকেই নিয়মিত অসুস্থ ছিলেন টেইলর। নিয়মিত ঠাণ্ডাজ্বর, প্রচন্ড মাথাব্যথা এবং অনিয়মিত মাসিক সবসময়েই তাকে প্যারা দেয়। এছাড়াও তার শরীরের একটি দিকে বিভিন্ন মেটালের প্রতি অ্যালার্জি আছে কিন্তু অন্য দিকে নেই। ২০০৯ সালে কাইমেরিজমের ওপরে একটা ডকুমেন্টারি দেখে টেইলর মিউল তার রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হোন।
কাইমেরা।
কাইমেরা (Chimera) হচ্ছে গ্রিক পুরাণের দুই মাথাওয়ালা কাল্পনিক জন্তু, যার একটি মাথা সিংহের আর অন্য মাথাটি শিংওয়ালা ছাগলের। এর লেজের অগ্রভাগটি আবার সাপের মাথার আকৃতি ধারণ করেছে। অর্থাৎ কাইমেরা মানে দাঁড়ায় একের ভেতর অনেক। কীগানের মতো লিডিয়াও এই কাইমেরিজমের একজন শিকার। এর অর্থ তার শরীরে দুই ধরণের ডিএনএ আছে।
কাইমেরিজম কি?
কাইমেরিজম হলো মাবদেহের এমন বিশেষ অবস্থা যেখানে একজনের দেহে একের অধিক রকমের জিনোটাইপ বা জিন দেখতে পাওয়া যায়। যার কারণে মানবদেহের ফিনোটাইপ বা বাহ্যিক লক্ষণ দুই বা ততোধিক হতে পারে। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে এ ও কি সম্ভব! উত্তর হচ্ছে হ্যাঁ, সম্ভব।
কেন কাইমেরিজম হয়?
টুইন বেবিদের ক্ষেত্রে যখন দু’টো জাইগোট পাশাপাশি মাতৃ জরায়ুতে অবস্থান করে, তখন অনেক সময়ই একটি জাইগোট অপর জাইগোট টিকে আংশিক বা পুরোপুরি ভাবে এবজোরব করে বসে। ফলে, আংশিক এবজোরব হওয়া জাইগোট থেকে ত্রুটিপূর্ণ (ক্ষণজন্মা) বাচ্চার জন্ম হয়। আর, যদি দ্বিতীয় জাইগোট টি পুরোপুরি এবজোরব হয়ে যায়, তবে তখন একটিমাত্র বাচ্চাই জন্মগ্রহণ করে। এখানে দ্বিতীয় জাইগোট টিকে এবজোরব করা প্রথম জাইগোট থেকেই জন্মলাভ করে কাইমেরিক বেবি।
কাইমেরিজমের বৈশিষ্ট্য
সকল কাইমেরিক ব্যক্তির মধ্যে একই ধরনের বৈশিষ্ট্য দেখা যায় না। ব্যক্তি ভেদে নানা রকমের বৈশিষ্ট্য দেখা যায়।সেগুলো নিচে দেয়া হলঃ
১) দুই রকমের রঙ পরিলক্ষিত হয় শরীরে। পুরো শরীরের ছোট অংশ জুড়ে কিংবা প্রায় অর্ধেকের মতো অংশে শরীরের বাকি অংশের চেয়ে গাঢ় রঙ হলে তা হাইপারপিগমেন্টেশন আর হালকা রঙ হলে তা হাইপোপিগমেন্টেশন।
২) রক্তে দুই ধরনের ডিএনএ সেট থাকা।
৩) দুই চোখের রঙ দুই রকম হওয়া।
৪) শরীরে দুই ধরনের ইম্যুনিটি সিস্টেম একইসাথে কাজ করে।
কাইমেরিজম রোগের প্রতিকার
অনেক ক্ষেত্রেই কাইমেরিজম রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির শারীরিক তেমন কোনো লক্ষণ না দেখা যাওয়ায় এই ব্যাপারে মানুষ তার জীবদ্দশায় জানতেও পারে না। বিভিন্ন প্রয়োজনে মানুষ ব্লাড ও ডিএনএ টেস্ট করানোতেই জানতে পেরেছেন তারা আসলে কাইমেরা। তবে কাইমেরিজমের তেমন কোনো প্রতিকার নেই। কাইমেরিজমের জন্য যেসব সমস্যা সৃষ্টি হয় সেসবের জন্য ডাক্তারের পরামর্শমত ওষুধ সেবন করলে সেগুলো অনেকটা উপশম হয়।
সূত্র:
quora.com
bigganbortika.org
roar.media
batikromkhobor.com