![]() |
| জীবনে অর্থের কতটা প্রয়োজন আছে? |
জীবনে অর্থের কতটা প্রয়োজন আছে? টাকা কি আমাদের সব সুখ এনে দিতে পারে না?
প্রথমেই আমি যদি আপনাকে প্রশ্ন করি যে, টাকাপয়সা, সম্পদ নিয়ে আপনার ভাবনা কেমন? এই অর্থই কি জীবনের সব সুখ এনে দিতে পারে? বিপুল সম্পদের মালিক হলেই কি সব সুখ মেলে? নাকি অন্য কিছুর প্রয়োজন আছে জীবনে? অর্থ ক্ষণিকের সুখ দিতে পারে ঠিকই, কিন্তু সব সময় সবকিছু অর্থ দিয়ে বিবেচনা করা কি সম্ভব? আপনার কাছে কি এসব প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট কোনো উত্তর আছে? সত্যি বলতে কারো কাছ থেকে এসব প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট কোনো উত্তর পাওয়া যাবে না।
জীবনে অর্থ এর প্রয়োজন ঠিক ততটা ই যতটা গাড়িতে “তেল” এর প্রয়োজন।
অর্থই জীবন, অর্থহীন মৃত্যু। অর্থের লোভে মানুষ নীতিবর্জিত হয়ে মুানুষ অহরহ নানা দুস্কর্মে লিপ্ত হয় তার হাজারো উদাহারণ আমাদের সমাজে বিদ্যমান। অন্যায় পথে অর্জিত অর্থ মানুষকে বিবেকহীন করে তোলে। অর্থের লোভলালসা মানুষের নৈতিককতার অধঃপতন করে। এই অর্থের লোভেই মানুষ চরিত্রহীন হয়ে সমাজ বিরোধী কাজে জড়িয়ে পড়ে। পৃথিবীর সকল প্রকার দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও অশান্তির কারণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অর্থ।
মানুষ পৃথিবীর বুকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে বিবেচিত হয় ধর্মীয় ব্যাখায় পৃথিবীর যা কিছু সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টি করেছেন সবকিছু মানুষের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে। হয়ত বা সেটাই সঠিক কিন্তু সকল ক্ষেত্রে এই সত্য কথাটি সত্য বলে মনে হয় না। মনে না হওয়ার পিছনে এই পার্থিব জগতের যে বস্তুটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তাহল মানুষের নিজের তৈরী কাগজের উপর প্রিন্ট করা এক কপি।
অর্থ এর প্রয়োজনীয়তা একেকজন এর কাছে একেকরকম।আমরা সবাই একে অপর থেকে আলাদা। সবার জীবন একে অপর থেকে আলাদা। সবার প্রয়োজন ও আলাদা।তাই টাকার গুরুত্ব ও সবার কাছে আলাদা।
যার বেতন দশ টাকা, তার কাছে এক হাজার টাকা অনেক টাকা। যার বেতন এক লাখ তার কাছে এক কোটি অনেক টাকা আর যার আয় এক কোটি তার কাছে এক শ কোটি হয়তো অনেক টাকা। অনেক টাকা হচ্ছে আপেক্ষিক কথা। আপনার যখন অনেক টাকা হয়ে যাবে, তখন মনে হবে এটাই স্বাভাবিক, এই টাকাই তো আমার থাকার কথা। তখন আপনি ছুটবেন আরও অনেক টাকার পিছে। এই ‘অনেকের’ পিছে ছোটা বন্ধ করা বেশ কঠিন। কারণ চাহিদা সহজে শেষ হতে চায় না।
অর্থ উপার্জনের জন্য মানুষ চিরকালই জীবন সংগ্রামে লিপ্ত হয়। নানা রকম পরিশ্রম করে, নানারকম বুদ্ধি খাটায়। নানা রকম প্রতিকূলতাকে জয় করার স্পৃহা জাগে তার মনের মধ্যে। অর্থ আমাদের জীবনের বিভিন্নরকম প্রয়োজন মেটায় বলে আমরা হয়ত অনেক সময় মনে করি অর্থ মুল্যহীন। তাই সারাজীবন আমরা অনেকে শুধু অর্থের পিছনে ছুটি আর ছুটি অন্য কোন দিকে কোন প্রকার খেয়াল রাখি না। বিপদে আপদে উৎসবে আনন্দে জন্ম মৃত্যুতে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই অর্থের প্রয়োজন এটা আমরা অস্বীকার করতে পারি না এটা সত্যি কিন্তু এই সকল বিষয়গুলো যে একমাত্র অর্থ দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয় তা কিন্তু আমরা জোর দিয়ে বলতে পারি না। অর্থ দ্বারা হয়ত আমরা কিছু সময়ের জন্য সুখ কিনে আনতে পারি এটা সত্যি কিন্তু সেটা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নয়।
অর্থের লোভ মানুষকে অমানুষ করে তোলে, অর্থের লোভ মানুষের নৈতিকতা নিকৃষ্টতম করে ফেলে। কোন কোন সময় জীবনের প্রয়োজনীয় এই জিনিসটি আপনাকে ভুল পথে পরিচালিত করে। সুস্থ সমাজ জীবন ও স্বাভাবিক সমাজ জীবন অতিবাহিত করার জন্য অর্থের প্রয়োজন অস্বীকার করা যাবে এটা সত্য তবে তা কখনও একমাত্র নিয়ামক নয়। জীবনে আপনার প্রয়োজনীয় অর্থের দরকার আছে তবে তা কখনই অঢেল নয়। অঢেল অর্থ আপনার জীবনের সুখ বয়ে আনবে না নিশ্চিত, অঢেল অর্থ কখনও কখনও আপনার জীবনকে ভুল পথেও পরিচালিত করতে পারে কাজেই আমাদের অঢেল অর্থের বিষয়ে সাবধান থাকাটা জরুরী। অঢেল অর্থ আপনার সন্তানকে বা আপনার নিজেকে অহংকারী করে তুলতে পারে আর অহংকার মানুষকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়।
পৃথিবীতে অর্থ হয়ত কোন কোন সময় আপনাকে কিছুটা অবলম্বন দিবে এটা সত্যি তবে সেই অবলম্বন কতটা শক্তিশালী হবে তা কিন্তু আপনাকেই নির্ধারণ করতে হবে। কারণ একটা কথা আপনাকে মনে রাখতে হবে অর্থ আপনি আপনার প্রয়োাজনে ব্যবহার করবেন অর্থ যেন আপনাকে ব্যবহার না করে। জীবনটা সুখি করতে শুধু অর্থের প্রয়োজনটাই মুখ্য নয় হয়ত কিছুটা প্রয়োজন।
গবেষকেরা মনে করেন, আমরা কীভাবে আমাদের অর্থ ব্যয় করব বা করছি, তা সুখের ধারণার ওপর একটা বড় প্রভাব ফেলে। মার্কিন লেখিকা গ্রেটচেন রুবিন তাঁর ‘দ্য হ্যাপিনেস প্রজেক্ট’ বইতে লিখেছেন, অর্থ সুখ কিনতে পারে না। তবে অর্থ ব্যয় করে আপনি যে অসংখ্য জিনিস কেনেন, তা আপনার সুখের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে।
