আমরা অনেকেই মুলা খেতে পছন্দ করি না। আবার অনেকে এই খাবারটি পাতেও নেয় না। তবে জানেন কি স্বাস্থ্যের জন্য মুলার উপকারিতা অনেক। নিয়মিত আমাদের খাবারের তালিকায় মুলা রাখা উচিত।
শীতকালীন সবজিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মুলা। অনেকে মুলার নাম শুনলেই নাক ছিটকান। মুলা নিয়ে প্রচলিত বিভিন্ন নেতিবাচক কানাঘুশা থাকলেও এর রয়েছে অসাধারণ কিছু গুণাবলি। নিচের উপকারিতগুলো যদি একবার কেউ জানতে পারেন তাহলে বাজারের তালিকা থেকে কখনোই বাদ পড়বে না এটি।
মুলায় প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম এবং ভিটামিন সি রয়েছে। এতে থায়ামিন, নিয়াসিন, রিবোফ্লাভিন, ফলিক এসিড এবং ভিটামিন 'বি৬', 'এ' এবং 'কে' রয়েছে। এছাড়া এটি আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস এবং জিঙ্কেরও ভালো উৎস।
নিয়মিত মুলা খেলে যেসকল উপকারিতা হয় সেগুলো হলো:
চুলের জন্য মুলার উপকারিতা।
নিয়মিত খাবারের তালিকায় মুলা যোগ করলে চুল ভালো থাকে। মুলার জুস খেলে চুল সিল্কি এবং বৃদ্ধি হয়। নিয়মিত মূলার ব্যবহার যা চুল পড়া সমস্যার সাথে লড়াই করতে সাহায্য করে। মূলার রস আপনার চুলে উজ্জল্য আনতে পারে। সর্বদা সেরা ফলাফলের জন্য তাজা মূলা রস ব্যবহার করুন। এছাড়াও মুলায় আয়রন থাকায় এটি স্বাস্থ্যকর চুল বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি চুলের সামগ্রিক গঠন এবং স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়তা করে।
হাড় মজবুত করা।
মুলার বীজ হাড় শক্তিশালী করে। বীজে উচ্চ পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে। হাড় মজবুত করার জন্য ক্যালসিয়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও মুলার বীজ শরীরে নিয়মিত মিনারেল সরবরাহ করে থাকে।
ক্যানসারের মতো মারণ রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া।
বর্তমান যা পরিস্থিতি তাতে শরীরকে এই মারণ রোগের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য প্রতিনিয়ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া উচিত। আর এই কাজে আপনাকে ব্যাপকভাবে সাহায্য় করতে পারে মুলা। কীভাবে? আসলে মুলার রসে উপস্থিত অ্যান্থোসায়ানিন এবং ভিটামিন সি শরীরের ভিতরে ক্যানসার সেলেরে জন্ম এবং বৃদ্ধির আটকায়। বিশেষত কোলন, ইন্টেস্টিনাল,স্টমাক এবং কিডনি ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমাতে এই পানীয়টি দারুনভাবে কাজে আসে।
হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানো।
এই সবজিটিতে উপস্থিত ‘অ্যান্থোসায়ানিন’ নামক একটি উপাদান, শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে হার্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে সময় লাগে না। ফলে কোনও ধরনের হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় থাকে না বললেই চলে।
অ্যাস্থেমার চিকিৎসা।
শ্বাস কষ্ট, সেই সঙ্গে হাঁচি-কাশিতে একেবারে জর্জরিত হয়ে পরেছেন? ফিকার নট! আজ থেকেই মুলার রস খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন কষ্ট কমে যাবে। আসলে মুলার রস, লাং-এ জমতে থাকা মিউকাসের দেওয়ালকে ভেঙে দেয়। ফলে অল্প দিনেই অ্যাস্থেমার প্রকোপ কমতে শুরু করে। এখানেই শেষ নয়, বমি ভাব, গলার ব্যথা এবং মাথা ঘোরার মতো সমস্যা কমাতেও এই প্রকৃতিক উপাদানটি সাহায্য করে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ।
মুলায় রয়েছে প্রচুর মাত্রায় পটাশিয়াম, যা রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই যাদের পরিবারে এই মারণ রোগের ইতিহাস রয়েছে, তারা রোজের ডায়েটে মুলাকে জায়গা করে দিতে ভুলবেন না যেন!
শরীরে ভিতরে প্রদাহের মাত্রা কমা।
প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকায় প্রতিদিন যদি মুলার রস খাওয়া যায়, তাহলে দেহের ভিতরে চোট-আঘাতের কারণে হওয়া জ্বালা-যন্ত্রণা কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফ্লেমেশন এবং কিডনির প্রদাহও কমে। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গেছে কিডনি স্টোনের আশঙ্কা কমাতেও মুলার রস নানাভাবে সাহায্য করে থাকে।
ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাওয়া।
একাধিক স্টাডিতে এ কথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে নিয়মিত মুলার রস খাওয়া শুরু করলে শরীরে ভিটামিন সি, জিঙ্ক এবং ফসফরাসের মাত্রা এতটা বৃদ্ধি পায় যে এদের প্রভাবে ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটতে যেমন সময় লাগে না, তেমনি একাধিক ত্বকের রোগও ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। প্রসঙ্গত, মুলার পেস্ট মুখে লাগালেও কিন্তু সমান উপকার পাওয়া যায়।
ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানেরা বেরিয়ে যাওয়া।
ব্লাডার, কিডনি, প্রস্টেট এবং ডাইজেস্টিভ ট্র্যাকে জমে থাকা ক্ষতিকর উপাদানদের শরীর থেকে বের করে এই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর কর্মক্ষমতা বাড়াতে মুলার কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। শুধু তাই নয়, শরীরের কোণায় কোণায় জমে থাকা টক্সিক উপাদানদের ক্ষতি করার আগে তাদের কডনির মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেওয়ার কাজটাও করে থাকে মুলার রস। প্রসঙ্গত, শরীর যত টক্সিক মুক্ত থাকবে, তত স্কিনের ঔজ্জ্বলতা বাড়বে। সেই সঙ্গে শরীর এবং মন চাঙ্গা এবং রোগ মুক্ত থাকবে।
ইমিউনিটির উন্নতি ঘটা।
মুলা এবং তার পাতায় উপস্থিত আয়রন এবং ফসফরাস শরীরে প্রবেশ করার পর দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে এতটাই শক্তিশালী করে তলে যে কোনও রোগই ধারে কাছে আসতে পারে না। সেই সঙ্গে শারীরিক ক্লান্তিও দূরে পালায়।
ভিটামিনের ঘাটতি দূর হওয়া।
একাধিক স্টাডিতে দেখা গেছে, নিয়মিত মুলার পাতা খাওয়া শুরু করলে দেহের ভিতরে নানাবিধ ভিটামিনের পরিমাণ যেমন বাড়তে থাকে, তেমনি আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতিও দূর হয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ছোট-বড় কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না।
কনস্টিপেশনের মতো রোগের প্রকোপ কমানো।
আপনি কি কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগছেন? তাহলে তো মুলার রস আপনার রোজের সঙ্গী হওয়া উচিত। আসলে এতে উপস্থিত বেশ কিছু কার্যকরি উপাদান হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি বাইলের প্রবাহ যাতে ঠিক মতো হয় সে দিকেও খেয়াল রাখে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কনস্টিপেশনের প্রকোপ কমতে শুরু করে।
দেখলেন তো মুলা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। তাই আজ থেকে খাবার তালিকায় অল্প পরিমাণে মুলা যোগ করতে ভুলবেন না।
সূত্র:
samakal.com
progotirbangla.com
dmpnews.org